Admission
পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র - চৌম্বক ক্ষেত্রে তড়িৎবাহী পরিবাহীর ওপর বল ও টর্ক

     

নিজে কর

একটি দণ্ড চুম্বককে খাড়া করে বা অন্যভাবে এমন করে রাখো যেন এর যে কোনো একটি মেরুর পাশে একটি পরিবাহী তার মোটামুটি মুক্তভাবে ঝুলতে পারে। এখন এই তারের দুই মাথা একটি শুষ্ক কোষের দুই প্রান্তের সাথে সংযুক্ত কর। কী দেখলে?

    ঝুলানো তারটি তার অবস্থান থেকে সরে গেল। তড়িৎবাহী তারটি একটি বল লাভ করে বলে এটি স্থানচ্যুত হয়। আমরা জানি, চৌম্বকক্ষেত্র গতিশীল আধানের ওপর বল প্রয়োগ করে। সুতরাং চৌম্বকক্ষেত্র তড়িৎবাহী পরিবাহীর গতিশীল আধানগুলোর ওপর তথা পরিবাহীর উপর অবশ্যই বল প্রয়োগ করবে। আমরা এখন তড়িৎবাহী পরিবাহীর উপর চৌম্বকক্ষেত্রের প্রযুক্ত এই বল নির্ণয় করব। ৪.১৪ চিত্রে একটি সুৰম চৌম্বকক্ষেত্রের দিকের সাথে লম্বভাবে স্থাপিত

চিত্র :৪.১৪

   একটি পরিবাহীকে দেখা যাচ্ছে। চিত্রে X চিহ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছে সুম চৌম্বকক্ষেত্র  B এর অভিমুখ হচ্ছে কাগজের তলের লম্ব বরাবর ভেতরের দিকে। পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ / ৰামদিক থেকে ডানদিকে প্রবাহিত হচ্ছে। সুতরাং আধান বাহক ইলেকট্রন ডানদিক থেকে বামদিকে গতিশীল।

ধরা যাক,

l = পরিবাহীর দৈর্ঘ্য

A = পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল

n = পরিবাহীর প্রতি একক আয়তনে ইলেক্ট্রনের সংখ্যা

q = প্রতিটি ইলেকট্রনের আধান

v = ইলেকট্রনের সঞ্চরণ বা তাড়ন বেগ

B = চৌম্বকক্ষেত্রের মান

I = পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহ

যেহেতু তড়িৎবাহী পরিবাহীটি চৌম্বকক্ষেত্রের সাথে লম্বভাবে স্থাপন করা হয়েছে, তাই পরিবাহীর প্রতিটি ইলেক্ট্রনের ওপর প্রযুক্ত চৌম্বক বল,

Fm = qvB sin 90° = gvB

এখন পরিবাহীতে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা N হলে পরিবাহীর সকল ইলেকট্রনের ওপর ক্রিয়াশীল বল তথা পরিবাহীর ওপর ক্রিয়াশীল বল,

F = NFm

কিন্তু N = n x পরিবাহীর আয়তন

  = nAl

:- F = nAl  Fm = nAlqvB

কিন্তু I = nAqv

: F = ILB... (4.19)

কিন্তু তড়িৎবাহী পরিবাহী যদি চৌম্বকক্ষেত্রের সমকোণে না থেকে θ কোণ উৎপন্ন করে তাহলে একটি ইলেক্ট্রনের ওপর প্রযুক্ত বল হবে,

Fm = qvB sin  θ এবং সমগ্র পরিবাহীর ওপর বল হবে

F = IIB sin  θ... (4.20)

    এই সমীকরণকে ভেক্টররূপে নিম্নোক্তভাবে দুটি ভেক্টরের ভেক্টর গুণফল হিসেবে লিখলে ঐ সমীকরণ থেকে প্রযুক্ত বলের মান ও দিক উভয়ই পাওয়া যায়।

F=Il×B ..  (4.21)

  এখানে ভেক্টর  l→এর মান পরিবাহীর দৈর্ঘ্য নির্দেশ করে। l→ এর দিক ধরা হয় ধনাত্মক আধানের গতির দিকে তথা তড়িৎ প্রবাহের দিকে।

N পাকের কোনো কুণ্ডলী হলে তার ওপর প্রযুক্ত বল

F=NIl×B

 বলের দিক :

   তড়িৎবাহী পরিবাহীর ওপর প্রযুক্ত বল F→ এর দিক সর্বদাই তড়িৎ প্রবাহ এবং B→ এর অভিমুখের সাথে লম্ব। ভেক্টর গুণনের দিক সম্পর্কিত ডানপাকের ক্রুর নিয়ম থেকে এর দিক পাওয়া যায়। তড়িৎ প্রবাহ তথা পরিবাহী এবং চৌম্বকক্ষেত্র B→  এর সমতলে একটি ডান পাকের স্কুকে লম্বভাবে স্থাপন করে তড়িৎ প্রবাহের দিক থেকে B→  এর দিকে ক্ষুদ্রতর কোণে ঘুরালে স্কুটি যে দিকে অগ্রসর হবে বল F→  এর দিক হবে সেদিকে।

 

চিত্র :৪.১৫

 বিশেষ ক্ষেত্র I :

   যদি তড়িৎ প্রবাহ তথা পরিবাহী চৌম্বকক্ষেত্রের সমকোণে থাকে, তাহলে বলের দিক ফ্লেমিঙের বামহস্ত সূত্র থেকে পাওয়া যায় ।

ফ্লেমিঙের বামহস্ত সূত্র: 

   বাম হাতের তর্জনী, মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলী পরস্পর সমকোণে প্রসারিত করে তর্জনীকে চৌম্বকক্ষেত্রের অভিমুখে এবং মধ্যমাকে প্রবাহের অভিমুখে স্থাপন করলে বৃদ্ধাঙ্গুলী পরিবাহীর ওপর প্রযুক্ত বলের অভিমুখ তথা পরিবাহীর গতির বা বিক্ষেপের দিক নির্দেশ করে [চিত্র ৪.১৫]। 

বিশেষ ক্ষেত্র II : 

  যদি তড়িৎবাহী পরিবাহীটি চৌম্বকক্ষেত্রের সমা।ন্তরালে থাকে অর্থাৎ প্রবাহ ও চৌম্বকক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত কোণ θ = 0° বা 180° হয়, তাহলে (4.17) সমীকরণ অনুসারে পরিবাহীর ওপর বল হবে,

 F=Il B sin0° =0 

সুতরাং চৌম্বকক্ষেত্রের সমান্তরালে স্থাপিত তড়িৎবাহী পরিবাহী কোনো বল অনুভব করে না।  

চৌম্বকক্ষেত্রে কোনো ক্ষুদ্র লুপের ওপর টর্ক

  

একটি লম্বা পরিবাহী ভার নিয়ে এটিকে ভাঁজ করে একটি আয়তাকার কুণ্ডলীর আকৃতি দাও (চিত্র ৪.১৭)।

চিত্র :৪.১৭

 সম্ভব হলে কয়েক পাকের কুণ্ডলী তৈরি করতে পারো। একে মোটামুটি মুক্তভাবে একটি U আকৃতির বা অশ্বক্ষুরাকৃতি চুম্বকের দুই মেরুর মাঝখানে এমনভাবে স্থাপন কর যেন এর সমতল ও চুম্বকের মেরুদ্বয় একই সমতলে অবস্থান করে। এখন এই কুণ্ডলীর দুই প্রান্ত একটি অ কোষের দুই প্রান্তে সংযুক্ত কর। কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে। কী দেখলে?

   কুণ্ডলীটি তার সাম্যাবস্থান থেকে ঘুরে গেল। কারণ চৌম্বকক্ষেত্রে স্থাপিত এই প্রবাহবাহী কুণ্ডলী বা লুপ একটি টর্ক লাভ করে ফলে ঘুরে যায়।

টর্কের রাশিমালা

  একটি আয়তাকার অন্তরিত তামার কুণ্ডলী আকৃতির ক্ষুদ্র বর্তনী WXYZ বিবেচনা করা যাক [চিত্র ৪.১৮)। এ কুণ্ডলীটিকে সুষম চৌম্বকক্ষেত্রের কোনো স্থানে এমনভাবে স্থাপন করা হলো যেন কুণ্ডলীতল চৌম্বকক্ষেত্রের সমান্তরাল থাকে।

   ধরা যাক,

L = কুণ্ডলীর দৈর্ঘ্য

b= কুণ্ডলীর প্রস্থ

.: A = L x b = কুণ্ডলীর ক্ষেত্রফল

চিত্র :৪.১৮

 N = কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা

 B = সুষম চৌম্বকক্ষেত্রের মান 

  I = কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ

  কুণ্ডলীর দুই বিপরীত বাহু WX এবং YZ চৌম্বকক্ষেত্রের সমান্তরাল থাকায় এদের ওপর কোনো বল প্রযুক্ত হবে না, কেননা বল,

 F = NlbB sin 0 = 0 [.0=0° বা, 180°] 

   কিন্তু ZWএবং XY বাহু দুটি চৌম্বকক্ষেত্রের সমকোণে থাকায় এদের

প্রত্যেকের ওপর ক্রিয়াশীল বলের মান

F = NILB sin 90° = NILB

   কিন্তু বাহু দুটিতে প্রবাহের অভিমুখ বিপরীতমুখী হওয়ায় ফ্লেমিঙের বামহস্ত সূত্রানুযায়ী বাহু দুটির ওপর ক্রিয়াশীল বল দুটির দিকও বিপরীতমুখী হবে। সুতরাং কুণ্ডলীর দুই বাহুর ওপর দুটি সমান, সমান্তরাল ও বিপরীতমুখী বল ক্রিয়া করে এবং এদের ক্রিয়ামুখ একই সরলরেখায় না হওয়ায় এরা একটি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে এবং এ দ্বন্দ্ব কুণ্ডলীটিকে এর মধ্যবিন্দু দিয়ে দৈর্ঘ্যের সাথে সমান্তরালে অতিক্রমকারী অক্ষ PQ এর সাপেক্ষে ঘুরাতে চেষ্টা করে। এ দ্বন্দ্বের ভ্রামক তথা টর্ক হলো,

  π = বল x বলদ্বয়ের তথা বাহু দুটির মধ্যকার লম্ব দূরত্ব

 = Fb

= NILBb = NILbB

 :. τ = NIAB..  (4.22)

   যদি চৌম্বকক্ষেত্র কুণ্ডলী তলের সমান্তরাল না হয়ে কুণ্ডলী তলের সাথে কোণে ক্রিয়া করে তাহলে কুণ্ডলী তল বরাবর চৌম্বকক্ষেত্রের উপাংশ হবে B cos Ψ  এবং টর্ক হবে,

τ = NIAB cos Ψ .. (4.22 ক) 

  যেহেতু B কুণ্ডলী তলের সাথে Ψ কোণ উৎপন্ন করে, সুতরাং B কুণ্ডলী তলের লম্বের সাথে 90° - Ψ =  θ কোণB উৎপন্ন করবে । 

 :- Ψ = 90° -  θ সুতরাং (4.22 ক) সমীকরণ দাঁড়ায়

 τ = NIAB cos(90° -  θ )

বা, τ = NIAB sin θ    … (4.22 খ)

   এখন A কে কুণ্ডলী তলের লম্ব বরাবর একটি ভেক্টর A হিসেবে গণ্য করলে A এবং B এর অন্তর্ভুক্ত কোণ হয়  θ। যেহেতু টর্ক একটি ভেক্টর রাশি তাই (4.22 খ) সমীকরণকে নিম্নোক্তভাবে দুটি ভেক্টরের ভেক্টর গুণফল হিসেবে প্রকাশ করলে ঐ সমীকরণ থেকে টর্কের মান ও দিক পাওয়া যায়।

 τ =A × B.. (4.23)

  এই A কে কুণ্ডলীর চৌম্বক ভ্রামক M বলে ।

:- M =A.. (4.24)

  এখন (4.26) কে আমরা লিখতে পারি,

τ = M × B... (4.25)

   প্রবাহবাহী কুন্ডলীর ক্ষেত্রফল ভেক্টর, A

   তড়িৎ প্রবাহবাহী কুণ্ডলীর ক্ষেত্রফল A কে একটি ভেক্টর A হিসেবে গণ্য করা হয় যার মান কুণ্ডলীর ক্ষেত্রফলের সমান এবং এর দিক কুণ্ডলীর তলের সাথে লম্ব। A এর দিক ডানহস্ত নিয়ম থেকে পাওয়া যায়। ডানহাতের চারটি আঙ্গুল কুণ্ডলীর মধ্যে প্রবাহ যে দিকে চলছে সে দিকে মুষ্টিবদ্ধ করলে প্রসারিত বৃদ্ধাঙ্গুলী A এর দিক নির্দেশ করে । এই নিয়মানুসারে কুণ্ডলীর মধ্যে প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার দিকে চললে A এর দিক হবে কুণ্ডলী তলের লম্ব বরাবর ভেতরের দিকে, আর ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে হলে A এর দিক হবে লম্ব বরাবর বাইরের দিকে ।

    প্রবাহবাহী কুণ্ডলীর চৌম্বক ভ্রামক, M

সংজ্ঞা : কোনো প্রবাহবাহী কুণ্ডলীর তড়িৎ প্রবাহ এবং কুণ্ডলীর ক্ষেত্রফল ভেক্টরের গুণফলকে ঐ কুণ্ডলীর চৌম্বক ভ্রামক বলে।

    কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা N তড়িৎপ্রবাহ I এবং ক্ষেত্রফল ভেক্টর A হলে, চৌম্বক ভ্রামক M হবে

 M = NIA

দিক : চৌম্বক ভ্রামকের দিক হলো ক্ষেত্রফল ভেক্টর A এর দিকে। উপরে বর্ণিত ডানহস্ত নিয়ম থেকে এই দিক পাওয়া যায় ।

 একক : চৌম্বক ভ্রামকের একক হচ্ছে অ্যাম্পিয়ার মিটার২ (Am2)।

বি: দ্র:

 ১। যদিও কুণ্ডলীর সাপেক্ষে B এর একটি বিশেষ দিকের জন্য এই টর্ক হিসেবে করা হয়েছে, কিন্তু টর্কের উপরিউক্ত সমীকরণ B এর যে কোনো দিকের জন্য প্রযোজ্য ।

২। টর্কের উপরিউক্ত সমীকরণ যদিও আয়তাকার কুণ্ডলীর জন্য প্রতিপাদন করা হয়েছে, কিন্তু এটি যে কোনো

আকৃতির বর্তনীর জন্য প্রযোজ্য

 

Content added || updated By